ফিতরার হকদার যারা…

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পবিত্র রমজান মাসে বিশেষ কিছু আমল আমাদের জন্য রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাদকাতুল ফিতর একটি অন্যতম ইবাদত। ঈদের দিন গরিবদের খাবারের জন্য শরিয়তপ্রদত্ত একটি ব্যবস্থাপত্র। সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা এ দিনটিতে তাদেরকে অন্যের কাছে চাওয়া থেকে বিরত রাখো। জাকাতের মতো এটিও দরিদ্র মানুষের ওপর মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আমলি সহযোগিতা।

ইসলামী শরিয়তের হুকুম মোতাবেক ঈদের দিনের ফজরের নামাজের আগে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তারও ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ফিতরা পাবার যোগ্য কারা বা ফিতরার হকদার কোন কোন প্রকারের লোকেরা? এ বিষয়ে ইসলামী বিদ্বানগণের মতভেদ রয়েছে।

একদল বিদ্বান মনে করেন: যারা সাধারণ সম্পদের জাকাতের হকদার তারাই ফিতরের জাকাতের (ফিতরার) হকদার। আর তারা হলো আট প্রকারের লোক-

(১) ফকীর

(২) মিসকিন

(৩) সাদাকা আদায়ের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী

(৪) যাদের অন্তর ইসলামের পথে আকর্ষণ করা প্রয়োজন

(৫) দাস-মুক্তির জন্যে

(৬) ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে

(৭) আল্লাহর রাস্তায়

(৮) মুসাফিরদের সাহায্যার্থে (সূরা তওবা /৬০)

এই মত পোষণকারীদের দলীল হলো : ফিতরের সাদাকাকে অর্থাৎ ফিতরাকে নবীজি (সা.) জাকাত ও সাদাকা বলেছেন তাই যেটা মালের জাকাতের খাদ হবে, সেটাই ফিতরারও হবে। সাদাকার যেই খাদ আল্লাহ সূরা তওবায় উল্লেখ করেছেন সেই খাদ সাদাকাতুল ফিতরের জন্যও হবে।

অন্য এক দল বিদ্বান মনে করেন : সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেবল ফকীর মিসকিনদের হক, অন্যদের নয়।

এই মত পোষণকারীদের দলীল হলো : ইবনে আব্বাস (রাযি:) এর হাদিস, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল ফিতরের জাকাত (ফিতরা) ফরজ করেছেন রোজাদারের অশ্লীলতা ও বাজে কথা-বার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিনদের আহার স্বরূপ’ (আবু দাউদ, জাকাতুল ফিতর নম্বর ১৬০৬/ হাদিস হাসান, ইরওয়াউল গালীল নম্বর ৮৪৩)

এই মতকে সমর্থন জানিয়েছেন ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল ক্বাইয়্যূম, শাওকানী, আযীমাবাদী, ইবনু উসাইমীনসহ আরো অনেকে। (দেখুন: মাজমুউ ফাতাওয়া ২৫/৭৩, যাদুল মাআদ ২/২২, নায়লুল আউত্বার ৩-৪/৬৫৭, আওনুল মা’বূদ ৫-৬/৩, শারহুল মুমতি ৬/১৮৪)

এই মতটিই অধিক সহীহ কারণ:
(ক) এই মতের পক্ষে দলীল বিদ্যমান আর প্রথম মতটি একটি কিয়াস (অনুমান) মাত্র। আর দলীল-প্রমাণের বিদ্যমানতায় কিয়াস বৈধ নয়।

(খ) ফিতরাকে জাকাত বলা হলেও উভয়ের মধ্যে আছে অনেক পার্থক্য। ফিতরা এমন ব্যক্তির ওপরও জরুরি যার বাড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে মাত্র। কিন্তু জাকাত কেবল তার ওপর জরুরি যে বিশেষ এক ভালো অংকের অর্থের মালিক। জাকাত ধন-সম্পদের কারণে জরুরি হয় কিন্তু ফিতরা ইফতারের কারণে দিতে হয়। এসব কারণে ফিতরা ও জাকাতকে এক মনে করা অসমীচীন।

বাকি থাকলো ফিতরাকে এই কারণে সাদাকা বলা হয়েছে যে, সাদাকা একটি দানের ব্যাপক শব্দ। জাকাত, ফিতরা এবং সাধারণ দানকেও সাদাকা বলা হয়। সাদাকা বললেই যে জাকাতকে বুঝায় তা নয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কুল্লু মা’রুফিন সাদাকা’ অর্থাৎ প্রত্যেক ভালো কাজ সদকা। তবে নি:সন্দেহে প্রত্যেক ভালো কাজ জাকাত নয়। তবুও নবীজী (সা.) সাদাকা বলেছেন। তাই ফিতরাকে সাদাকা বলার কারণে তা জাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, জাকাতুল ফিতরের খাদসমূহের মধ্যে মাদরাসা ও মসজিদ নেই। কিন্তু মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম যদি ফকীর মিসকিনদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তারা ফিতরার হকদার হিসেবে গণ্য হবেন বরং অন্যান্য ফকীর মিসকীনদের থেকে তারা বেশি হকদার হবেন। কারণ এরা দ্বীনের শিক্ষা অর্জনে ও অন্যকে শিক্ষা দানে নিয়োজিত, যেই গুণটি অন্য ফকীর মিসকিনদের নেই। (আর যা সঠিক তা আল্লাহই ভাল জানেন)

সূত্র: শাইখ আব্দুর রাকীব (মাদানী) লিসান্স, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়। দাঈ, খাফজী দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর